সুখী ব্যক্তির সন্ধান

“সখী ব্যক্তির সন্ধান” হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. তার মাওয়ায়েযের মধ্যে এ ঘটনাটি লিখেছেন।

এক ব্যক্তির সঙ্গে হযরত খিযির আ.-এর সাক্ষাৎ হলাে। ওই ব্যক্তি হযরত খিযির আ.-কে বলল : হুযুর! আমার জন্যে দোয়া করুন যেনাে আমার জীবনে কোনাে চিন্তা ও কষ্ট না থাকে। সারা জীবন যেনাে নিশ্চিন্তে কাটাতে পারি।

হযরত খিযির আ. বললেন, এ দোয়া করা অসম্ভব। কারণ দুনিয়াতে মানুষের দুঃখ-কষ্ট থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বরং তুমি এক কাজ কর, দুনিয়া জুড়ে খুঁজে দেখাে যাকে তােমার সবচে’ সুখী মনে হয় তুমি আমাকে তার ঠিকানা বলে দেবে। তখন আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব যেনাে আল্লাহ তােমাকে তার মতাে সুখী করেন।

লােকটি খুব খুশি হলাে। ভাবল এমন লােকতাে অবশ্যই পাব যার কোনাে চিন্তা নেই। যে ব্যক্তি অনেক সুখী। তখন তার মতাে হওয়ার জন্যে দোয়া চেয়ে নেব। সুখী মানুষের অনুসন্ধান শুরু হলাে। কখনাে এক ব্যক্তিকে দেখে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তার মতাে হওয়ার আবেদন জানাবে। আবার যখন তার চেয়ে ধনী কাউকে নজরে আসে তখন আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ভাবে যে, না। তার মতাে হবার জন্যেই আবেদন করবে। মােটকথা, দীর্ঘদিন অনুসন্ধানের পর এক সুখী ব্যক্তির সন্ধান পেল ।

যেব্যক্তি স্বর্ণ-রৌপ্য ও মূল্যবাণ পাথরের ব্যবসা করত। বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আলিশান বাড়ি। দামি সওয়ারী। অনেক চাকর-নওকর তার সেবায় নিযুক্ত। তার যুবক ছেলেটিকে দেখে মনে হয় যেনাে রাজপুত্র। বাহ্যিক দৃষ্টিতে লােকটিকে তার কাছে সবচে’ সুখী মনে হলাে। লােকটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল যে, তার মতাে হবার জন্যেই দোয়া চাইবে।

চূড়ান্তসিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় আবার হঠাৎ মনে হলাে, বাহ্যিকভাবে লােকটিকে দেখে সুখী মনে হয়। কিন্তু আভ্যন্তরীণ কোনাে সমস্যা তাে থাকতে পারে। যে সমস্যার ফলে আমার বর্তমান অবস্থাকেও হারাতে হতে পারে। সুতরাং তাকে জিজ্ঞেস করা উচিত যে, এখন সে কী অবস্থায় আছে?

ভেবে চিন্তে লােকটি ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে বলল : ভাই! তুমিতাে বড় সুখী মানুষ। তােমার অঢেল সম্পদ, আলিশান বাড়ি, অনেক খাদেম, বিশাল ব্যবসা। আমি তােমার মতাে হতে চাই। আবার এমন তাে নয় যে, তুমি মানসিক কোনাে কষ্টে আছাে অথবা কোনাে অসুস্থতায় ভুগছাে?

ব্যবসায়ী লােকটি ওই লােকটিকে আলাদা কামরায় নিয়ে বলল : তােমার ধারণা। যে, আমি বড় সুখ শান্তিতে আছি, তাই না? আমার চাকর-বাকর, টাকা-পয়সা অনেক। কিন্তু এ পৃথিবীতে আমার চেয়ে বেশি দুঃখ-কষ্ট অন্য কারাে নেই। তারপর লােকটি তার স্ত্রীর চরিত্র সম্পর্কে এক দুঃখজনক ঘটনা শােনাল।

বলল : এ সুদর্শন যুবক অর্থাৎ যে ছেলেকে তুমি দেখছ সে আমার প্রকৃত সন্তান নয় । যার ফলে একটি মুহূর্তও আমার কষ্টহীন কাটে না। আর আমার মনে কষ্টের যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে সে ব্যাপারে তুমি কিছুই জান না। সুতরাং আমার মতাে হওয়ার জন্যে তুমি কখনাে দোয়া করাে না।’

এতক্ষণে লােকটির বুঝে আসল যে, দুনিয়াতে যত মালদার বা ক্ষমতাসীন লােকই হােক না কেনাে সবাই কোনাে না কোনাে বিপদে আছে।দ্বিতীয়বার যখন হযরত খিযির আ.-এর সঙ্গে লােকটির সাক্ষাৎ হলাে তখন জিজ্ঞেস করলেন : ভাই! তুমি কার মতাে হতে চাও?

লােকটি বলল : দুনিয়াতে এমন কাউকে পাইনি; যে ব্যক্তি চিন্তা ও পেরেশানি মুক্ত। যার মতাে হবার দোয়া আমি আপনার কাছে চাইব। হযরত খিযির আ. বললেন : আমি তােমাকে প্রথমেই বলেছিলাম দুনিয়াতে চিন্তা মুক্ত কাউকে পাবে না। বরং আমি তােমার জন্যে এ দোয়া করি যে, আল্লাহ তােমাকে বিপদমুক্ত জীবন দান করুন।

<< নিরানব্বই খুনির পল্প   —   সৌন্দর্যের আড়ালে বিষ >>

[“নির্বাচিত গল্প ~ মুফতি তাকী উসমানী” হতে চয়নকৃত]

You may also like...

error: Content is protected !!