হক-বাতিলের দ্বন্দ্ব : কোন পথে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম?
হক-বাতিলের দ্বন্দ্ব : কোন পথে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম?
মুফতি তারেকুজ্জামান (দাঃবাঃ)
আহ, বিতর্ক করতে আমরা কতইনা দক্ষ! নিজ দলের মানহাজ সঠিক প্রমাণ করতে কতইনা আমরা বিজ্ঞ! অজ্ঞ হওয়ার ভান করি কেবল কুরআন-সুন্নাহর বেলায়! কুরআন-সুন্নাহর কথা সামনে আসলেই মুখস্ত বুুুলি বলে দিই যে, আমরা এসবের কিছুই বুঝি না। আমাদের নির্দিষ্ট ঘরানার বড়দের বুঝের বাইরে বুঝতে গেলে গোমরাহ হয়ে যাব। হায়, তাদের তো জানা নেই যে, বড়রা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়লে করণীয় কী! তখন কোন বড়কে মানতে হবে, জানা নেই তাদের সে ব্যাপারে নীতিমালা কী!! বস্তুত মৌলিকভাবে কুরআন-সুন্নাহকে সামনে না রাখলে দিনশেষে ব্যক্তিপূজাই হয়ে থাকে মূল; যদিও মুখে সেটা স্বীকার না করা হোক।
দিনদিন দলীয় কোন্দল আর ব্যক্তিপূজা বেড়েই চলছে। আক্রমণ, প্রতিআক্রমণ, পারস্পরিক বিদ্বেষ ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে―বড় থেকে ছোট, পির থেকে মুরিদ সবার মাঝেই। নামধারী তথাকথিত কিছু বড়দের দেখে ছোটরা শিখছে আদাবুল ইখতিলাফের ময়দানে কীভাবে উগ্র হতে হয়! প্রায়োগিকভাবে শিখে নিচ্ছে দলীয় স্বার্থে কীভাবে আ্যটাক করতে হয়!! আহ, এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে ইসলামের দুশমনদের আর কী দরকার ভাই! আমরা নিজেরাই তো নিজেদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট!! দলীয় কোন্দলের এ গণ্ডি থেকে আমরা কেন যেন আজও বের হতে পারছি না! আল্লাহই জানেন, এ কোন্দলের শেষ কোথায়।
মতানৈক্য ও দলীয় কোন্দলের মহাফিতনার এ জমানায় আজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ হাদিসের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যারা গ্রহণ করার, তারা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করবে; আর যাদের অন্তর বক্র, তারা হাদিসটির অপব্যাখ্যা দিয়ে দিনশেষে ব্যক্তিপূজায়ই লিপ্ত থাকবে। বস্তুত হিদায়াত আল্লাহর বিশেষ এক ফজল ও অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করেন। আমরা আল্লাহর কাছে সর্বদা সিরাতে মুসতাকিম ও তরিকুল জান্নাহ কামনা করি। এটার জন্য আমাদের নিম্নোক্ত হাদিসটির প্রতি খুব ভালো করে খেয়াল করা দরকার।
মুসতাদরাকে হাকিমে বর্ণিত হয়েছে :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ النَّاسَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ، فَقَالَ:… إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বললেন, …নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা আঁকড়ে ধরো, তবে কখনো বিভ্রান্ত হবে না। সেটা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ।’ (মুসতাদরাকুল হাকিম : ১/১৭১, হা. নং ৩১৮, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)
ওহ! কী সুন্দর কথা! নবিজির কথা কতইনা সত্য! ফিতনার জমানায় তাঁর সে কথার বাস্তবতা আজ কতইনা স্পষ্ট!! কিন্তু আফসোস যে, এত স্পষ্ট হাদিস থাকার পরও একদল লোক এসে কিন্তু ঠিকই হাদিসটির অপব্যাখ্যা শুরু করবে। লোকদেরকে জাহিলিয়াতের যুগের মতো বাপ-দাদার ধর্মের ওপর অটল রাখার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ সরল কথাটিরও গরল ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে। নইলে যে নিজেদের রাজত্ব হারাতে হবে! মূলত এদের অপব্যাখ্যার কারণেই আজ অনেক সত্যান্বেষী মানুষ সত্যের দিশা খুঁজতে গিয়েও বারবার নিরাশ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
আজকের এ মহাদুর্যোগের সময় আমাদের জন্য সত্যের মাপকাঠি বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা দল নয়; বরং প্রতিটি ব্যক্তি বা দলকে মাপতে হবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে। যারা এ বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হবেন, তাদের কথা অনুসরণ করতে হবে; যতক্ষণ না তারা দ্বীনের স্পষ্ট পথ থেকে সরে যান। কেউ সরে পড়লে সেও পরিত্যাক্ত হয়ে যাবে, ইতিহাসে যার অসংখ্য নজির রয়েছে। আমরা যদি এ নীতি অনুসরণ করে চলি, তাহলে আল্লাহ চাইলে আমাদের কেউই পথভ্রষ্ট করতে পারবে না; যেমনটি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জানিয়ে গেছেন।
আল্লাহ আমাদের সব ধরনের ভ্রষ্টতা, উগ্রতা, দলান্ধতা, পক্ষপাতিত্ব ও সত্যবিমুখতা থেকে দূরে রাখুন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো সরল পথে ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে আমৃত্যু অবিচল রেখে বিশুদ্ধ ইমানের ওপর মৃত্যুদান করুন।